Timeঃ---

Subject Review on CSE ( Computer Science and Engineering )




সাব্জেক্ট রিভিউ শুরু করার আগে কিছু কথা বলে নেয়া দরকার । মনে করো, কেউ একজন এসে বলে বসলো...
        - ভাইয়া, CSE তে পড়তে চাই । 

আমি বললাম হ্যা, সেতো খুবই ভালো কথা ! এর পরে যখন এর পেছনের মোটিভেশন জানতে চাইলাম,তখন শোনা গেলো,
        -ভাইয়া, শুনেছি CSE তে তেমন পড়াশুনা করা লাগে না । ফেল-টেল করলেও সমস্যা নাই । 
         আবার ফ্রিল্যান্সিং করে টাকাও ইনকাম করা যায় সহজে ।
        - তাই নাকি? তা আর কি কি শুনেছো ? 
        - একজন ভাই শুধু ফেল করতো, কিন্তু তবুও লাখ লাখ টাকা বেতনের চাকরী করতেছে... ব্লা ব্লা ব্লা
এই ধরনের মোটিভেশন থেকে যদি CSE পড়তে আসতে চাও, তবে তোমাকে আমি আশ্বাস দিতে পারি , তুমি হতাশ হতে চলেছো ভীষণভাবে । তাই এই মূহুর্তে তোমার নেয়া সিদ্ধান্তে বায়াসড না হয়ে নিরপেক্ষভাবে বাকি অংশটুকু পড়তে পারো ।
এখন CSE অনেকটা ট্রেন্ডিং একটা সাব্জেক্ট । সবার মুখে মুখে এর নাম শোনা যায় । এই সাব্জেক্টে পড়তে পারলে একটা ভাব হয় । আমি আশা করবো শুধু এই কারণে তুমি যেন CSE পড়তে না আসো । 
কি ধরনের কোয়ালিটি থাকলে তুমি CSE পড়তে এসে মজা পাবা, CSE তোমার পছন্দের সাব্জেক্ট হতে পারে ।
লেগে থাকার অভ্যাসঃ লেগে থাকার অভ্যাস একটা দক্ষতা । ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস ১২ পর্যন্ত যখন ম্যাথ করতাম তখন কি কখনো ভাবতাম এগুলো কেন করতাম ? যদি কারো নিজে নিজে সেগুলো চেষ্টা করার অভ্যাস থেকে থাকে , একাই একাই ম্যাথ বা অন্য প্রব্লেম সলভ করার অভ্যাস থেকে থাকে , একবার না পারলে সেটা ছেড়ে দেয়ার পরও আবার মাথায় সেই প্রব্লেম ঘুরতে থাকে, সমাধানের হাজারটা উপায় খুঁজতে থাকো, তবে CSE তোমাকে হতাশ করবে না কখনো । চারটি বছর অনেক আনন্দময় হবে ।
বিশ্লেষণ ক্ষমতা (Analytical Skill): আমরা সাধারণত যাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা অনেক ভালো তাদের ক্রিয়েটিভ বলে ফেলি । এই বিশ্লেষণ ক্ষমতা আসলে কি ? এটি হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ, সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোন সমস্যা সমাধানের একটা দক্ষতা । তোমার কাছে যে তথ্যগুলো থাকবে সেগুলো ব্যবহার করেই একটা ডিসিশন মেকিং, একটা বেস্ট ডিসিশন মেকিং । এখানে বলে রাখি, যাদের HSC তে ম্যাথ আর থিওরিক্যাল বিষয়গুলোতে ইন্টারেস্ট ছিলো বেশি তারা এই বিষয়টা উপভোগ করবা । তোমাকে হতে হবে একজন প্রব্লেম সলভার, একজন নতুন আইডিয়া জেনারেটর ; প্রবলেম সল্ভিং তোমার জন্য এক খেলার মতো উপভোগ্য একবিষয় ।
আমি মনে হয়, তোমাদের CSE নিয়ে ডিমোটিভেট করে ফেললাম কাউকে কাউকে। তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, বাস্তবতার অনুপ্রেরণা কখনো হারিয়ে যায় না । আর তোমাকে বলে রাখি, বিশ্‌ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি হতাশায় ভোগে । আবার কারো জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলোও কিন্তু সেই বিশ্‌ববিদ্যালয় জীবনেই পূর্ণতা পায় । তাই কারো কথার ফুলঝুড়িতে যেন তোমার বিশ্‌ববিদ্যালয় জীবনের শুরু না হয় ।
অনেক কথাই বলে ফেললাম, KUET CSE তে কি কি ল্যাব আছে, সেটা এক ঝলকে দেখে ফেলা যাক ।
  • Introduction to Computer (Scratch and Python language)
  • Structured Programming Laboratory (C Language)
  • Computer Aided Design Laboratory (AutoCAD)
  • Object Oriented Programming Laboratory (C++ )
  • Data Structures and Algorithms
  • Advanced Programming (JAVA for Android Development)
  • Algorithm Analysis and Design Laboratory
  • Microprocessors and Microcontrollers Laboratory (Assembly Language)
  • Numerical Methods Laboratory
  • Web Programming Laboratory
  • Database Systems Laboratory
  • Software Engineering and Information Systems Laboratory
  • Peripherals and Interfacing Laboratory
  • System Development Project
  • Operating Systems Laboratory
  • Complier Design Laboratory
  • Mobile Computing Laboratory
  • Computer Networks Laboratory
  • Artificial Intelligence Laboratory
  • Technical Writing and Seminar
এগুলো নিয়ে একটু সময় নিয়ে গুগল করো, এসব বিষয়ে তোমার ইন্টারেস্ট কাজ করে কি না ? এভাবে গুগল করে করে শেখার অভ্যাস খুব জরুরি । এই সাব্জেক্ট এ পড়তে হলে অনেক কিছুই তোমার নিজে নিজে শিখে নিতে হবে । সেই মাইন্ডসেট নিয়েই যেন তুমি আসো, খেয়াল রাখবে অবশ্যই ।
আমি ধরে নিচ্ছি , প্রোগ্রামিং, অ্যালগরিদম, ডেটাবেজ, অপারেটিং সিস্টেম সহ রিলেটেড বিষয় গুলো নিয়ে তুমি HSC ICT তে ধারণা অর্জন করে ফেলেছ । আরো একটু স্পষ্ট ধারণা অর্জনের জন্য এই লেখাটা পড়তে দেখতো পারো ।
CSE পড়ে কি করবো ?
  • এখন আমরা প্রযুক্তির যে পর্যায়ে বসবাস করছি , এখনের Social Problem গুলোর বেস্ট সলুশনগুলো হবে ICT Based সলুশন । সেক্ষেত্রে CSE এর স্টুডেন্টরা এগিয়ে থাকবে ।
  • বাংলাদেশে যখন টেলিকম কম্পানিগুলো তাদের নেটওয়ার্ক বাড়ানো কাজ করছিল তখন প্রচুর পরিমাণে EEE ইঞ্জিনিয়ার দরকার ছিল । কিন্তু তাদের নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কাজ শেষে তারা এখন ভ্যালু সার্ভিসগুলোতে মনোযোগ দিচ্ছে । আর এখনেই CSE এর স্টুডেন্টদের প্রয়োজন ।
  • বাংলাদেশে CSE পড়ে তোমার ক্যারিয়ার কি হতে পারে। এখানে পড়ে ফেল ঝটপট ।
  • অ্যান্ড্রয়েড আপ ডেভেলপ করেও তা প্লে স্টোরে রেভিনিউ জেনারেট করতে পারো । কিংবা আইফোনের জন্যও অ্যাপ ডেভেলপ করতে পারো । কোন একটি ভালো অ্যাপের রেভিনিঊ ৬ ডিজিটের সংখ্যা বা তারচেয়ে বেশি হতে পারে । এক্ষেত্রে মানুষের প্রবলেম সলভ করাটাই মেইন কনসার্ন হওয়া উচিত ।
  • · তুমি চাইলে নিজেই একটা Start Up দিয়ে ফেলতে পারবে । শুধু কম্পিউটার আর তোমার ব্রেইন দিয়েই তুমি একটা কোম্পানি শুরু করে দিতে পারো । তোমার কোম্পানী তুমিই CEO , কি মজা , তাই না ।
  • বাংলাদেশে CSE graduate দের সেলারি সাধারন 40K+ হয়, ৬ মাস চাকরী করার পর 60-70k । আবার এখানে একটা মজার ব্যাপার ঘটতে দেখবে , CSE graduate দের কেউ দেখবে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার আগেই জবের অফার পাচ্ছে , আবার কেউ জবই পাচ্ছেই না , শেষে 10-20k সেলারির চাকুরি করতে হচ্ছে । আবার কাউকে দেখবে দেশেই 100k+ সেলারি পাচ্ছে । আর দেশের বাইরে যেতে চাইলে সেলারি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে । তোমার দক্ষতাই তোমার পরিচায়ক।
  • আউটসোর্সিং করেও তুমি ভালো ইঙ্কাম করতে পারবে । একেকটা আপ ডেভেলপমেন্টের প্রোজেক্ট ৫০০ ডলার থেকে শুরু করে ১৫০০+ ডলার হতে পারে । আবার গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ওয়েব ডেভেলমেন্টের অনেক কাজ করেও অনেকে মোটা অংকের প্রফিট জেনারেট করে । তবে ক্যারিয়ার হিসেবে আউটসোর্সিং দীর্ঘমেয়াদি কোন ক্যারিয়ার হতে পারে না বলে অভিজ্ঞরা মতামত দেন ।
  • প্রোগ্রামিং এ আনন্দ না পেলে নেটওয়ার্কিং এ ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে তোমার জন্য । তবে প্রোগ্রামিং এ আনন্দ না পেলে গ্রাজুয়েশনের ৪ বছর যে আনন্দদায়ক হবে না তা আশা করি বুঝতেই পারছো এতক্ষণে ।
নিচের বিষয়গুলো নিয়ে অতি আগ্রহীরা একটু নেটে সার্চ করতে পারো ।
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভবিষ্যতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে । তুমি যে ফেসবুক ব্যবহার করো , কখনো কি ভেবে দেখেছো ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে দেয়া তোমার ছবিটাতে নিজে নিজে কি করে চিনে নিচ্ছে । অথবা সোফিয়ার মতো কোন রোবট মানুষের মতো করে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে । একটা মেশিন কি না মানুষের মতো নিজে নিজে শিখে নিচ্ছে কত্ত কিছু ।
  • বাংলাদেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি, মানে অনেক পরিমাণ ডাটা ( Big Data)। আর এদিকে ফেসবুকের ডাটা নিয়ে কত কিছুই না হয়ে গেলো । কারণ অনেক মানুষের ডাটা থাকলে অনেক কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ফেলা যায় । ব্যাপারটা কিছু মজার ! কি বলো !
অনেক কথা হলো এবার কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং নিয়ে কিছু বলি,
কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং (Competitive Programming) হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক ( বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ) এক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা । কিছু সমস্যা দেয়া থাকবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেগুলো সমাধান করতে হবে । কিছু ওয়েবসাইটে এগুলো আয়োজন করে থাকে । সবার র‍্যাংকিং করে । তুমি সারা বিশ্বের সেরা প্রোগামারদের সাথে প্রতিযোগিতা করার এক অসাধারণ সুযোগ পাবে। আবার কোন কোন কন্টেস্টে বেশি ভালো করলে বড় বড় কোম্পানি গুলো ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকে । কখনো কখনও কন্টেস্টে ভালো করলে প্রাইজ মানি থাকে , কি মজা ! এই কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং যে কতটা আনন্দময় আর আমেইজিং একটা কিছু হতে পারে , নিজে পারটিসিপেট না করলে বুঝতে পারবে না। এবার এই আনন্দ পেয়েছে এমন কয়েকজনের কথা বলি ।
Special Group Interested in Programming Contest , ছোট করে SGIPC । KUET এর একটা ক্লাব । নাম শুনেই বুঝতে পারছো এই ক্লাবের কাজ কি হতে পারে । কিন্তু যেটা বুঝতে পারছো না , তা হচ্ছে এর সাথে যুক্ত কিছু মানুষ , তাদের প্রোগ্রামিং এর প্রতি ভালোবাসা । এরা হচ্ছে “নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো” টাইপ মানুষ । সকাল ৮ টা থেকে ক্লাস , বিকেলে আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ল্যাব করে ক্লান্ত হওয়ার পর, সন্ধায় কিছু ছেলে-মেয়েদের প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য নতুন করে উদ্দীপ্ত হয়, সেই উদ্দীপনা তাদের ক্লান্তি দূর করে দেয় । প্রোগ্রামিং এর সব ধরনের হেল্প করার জন্য তারা আছে সবসময়।
স্টিভ জবসের একটা কথা বলে শেষ করবো ,
"Your work is going to fill a large part of your life, and the only way to be truly satisfied is to do what you believe is great work. And the only way to do great work is to love what you do. If you haven't found it yet, keep looking. Don't settle. As with all matters of the heart, you'll know when you find it."
সবকিছুর পরে একটা কথাই বলবো , তোমার নিজের লাইফ, নিজে বুঝে সিদ্ধান্ত নিবা অবশ্যই । আফসোসের কোন অপশন যেন না থাকে ! আর সবগুলো কথা মাথায় রেখে, যদি নিজের ইচ্ছাতে CSE তে পড়তে চাও, সত্যি বলছি, তোমার জন্য এক স্বপ্নময় সুন্দর সময় অপেক্ষা করছে । ।

Post a Comment

Previous Post Next Post